রাজশাহীতে নগরীতে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ নগরবাসী

রাজশাহীতে নগরীতে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ নগরবাসী

রাজশাহীতে নগরীতে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ নগরবাসী
রাজশাহীতে নগরীতে বিদ্যুতের লুকোচুরি, অতিষ্ঠ নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী নগরীতে ক্রমেই বেড়েছে বিদ্যুতের লুকোচুরি। মাঝে মাঝেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে উকি দিচ্ছে বিদ্যুৎ। এতে অনেকটায় বিপর্যস্ত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন-যাপন।

রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকেই নগরীর শিরোইল কাচাবাজার, শিরোইল কলোনি, সাগরপাড়া, বোশপাড়া, হেতেম খাঁ, নিউ মার্কেট, বালিয়াপুকুর, ভদ্র, উপশহরসহ নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ছিল না বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে বাড়ি-ঘরে বসবাসরত মানুষ সহ হাট-বাজার, অফিস-আদালতে কর্মরত সকলের চোখে মুখেই দেখা গেছে ক্ষোভের অভিব্যক্তি।

এবিষয়ে নেসকোর অভিযোগ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কুমার শাহা বলছেন, নগরীর দেবিশিং পাড়া হোটেল এলিগেন্সের দক্ষিণ দিকে ভোরের দিকে একটি সমস্যা হয়। সেখানে পোলের লো ট্রান্সফরমারের একটি তার পাশের গাছের সাথে ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ৩৩০০ ভোল্টের একটি তার ছিড়ে পড়ে। যার কারণে সকাল থেকে বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেবিশিং পাড়ার পড়ে থাকা ওই তারটি পাশের বিল্ডিং এর কর্মীরা সরিয়ে দিলে সেখানে আগুন ধরে যায়। এঘটনায় ফায়ার এন্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভায়। তারপর পুড়ে যাওয়া তারটিকে পুণরায় মেরামতের কাজ শুরু করে নেসকো কর্মীরা।

বিদ্যুৎ কুমার শাহার ভাষ্য, ‘মূলত: অতিরিক্ত চাপ পড়লে ট্রান্সফরমার পুড়ে যায় কিংবা ফিউট নষ্ট হয়ে পড়ে। তখনই বিদ্যুৎ চলে যায়। এসব মেরামত করতেও বেশ সময় লাগে।’

নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার আলম বিশাল বলেন, ‘শুধু আজ নয়, প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাতে বিদ্যুৎ থাকে না। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ ঘন্টা বিদ্যুতের কোন নাগাল থাকে না। গতকাল ও আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এছাড়াও বিকেলে ও রাতের বিভিন্ন সময়েও বিদ্যুতের লুকোচুরির খেলা লেগেই থাকে।

ক্ষোভের স্বরে তিনি বলেন, ‘যখনই অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করি তখনই বলা হয়- ‘লাইনের কাজ চলছে’। লাইনের সমস্যার কাজ কী প্রতিদিনই হয়?’

নগরীর হেতেম খাঁ এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামান জনি। হেতেম খাঁ মহিলা কলেজের পাশেই তার কম্পিউটার ও ফটোকপির দোকান। বিদ্যুতের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টানা লকডাউন গেলো দোকান প্রায় ১৮ মাস খুলতে পারিনি। তারপর আল্লাহ্র ৩০ দিনেই বিদ্যুতের সমস্যা। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে কাজ করব কি, আর খাবো?

তিনি বলেন, ‘কারেন্ট না থাকায় একটার পর একটা কাস্টোমার ঘুরে ঘুরে চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ঠিকভাবে না দিতে পারলেও বিদ্যুৎ বিল মাসে মাসে ঠিকই গুনতে হচ্ছে।’

শিরোইল মোল্লামিলের বাসিন্দা আশিকুজ্জামান জীম বলেন, ‘গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। আজো সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারেন্ট লাপাত্তা। আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসা-যাওয়া তো লেগেই আছে। সবমিলিয়ে নেসকো’র সেবায় একেবারে ঘেন্না ও বিরক্তি চলে এসেছে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ জানানোরও কোনো উপায় নেই।’

একই এলাকার বাসিন্দা মোতাহারা জাহান। পেশায় স্কুলের শিক্ষিক। তার ভাষ্য, ‘১২ তারিখ থেকে স্কুলের ক্লাশ নেওয়া, বাসায় প্রাইভেট পড়ানো, বাড়ির রান্না-বান্না ও শিক্ষার্থীদের এ্যাসাইনমেন্টের খাতা দেখতে হয়। কিন্তু এতো কাজের মধ্যে এই গরমে যদি বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে তবে যে কোনো মানুষই রাগান্বিত হবেন স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির দোতলায় থাকেন পিটিআইয়ের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন যাবত বিছানাগত। কারেন্ট চলে গেলে এই গরেমে তার কষ্টের সীমা থাকে না।’

নগরীতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ জানতে চাইলে তিনি রাজশাহী নেসকো লি: এর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘কাঁটাখালি গ্রিডে একটি সমস্যার কারণে কয়েকদিন বিদ্যুৎ নিয়ে আমরা সমস্যায় ছিলাম। তবে এখন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি কোথাও কোন সমস্যা ঘটে থাকে সেটি কোন না কোন সমস্যার কারণেই হবে হয়ত।’

মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎতের লুকোচুরির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমাদের ডিমান্ডের তুলনায় সাপ্লাই কম। প্রতিদিন যেখানে ৮৭ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ লাগে, সেখানে আমি পাচ্ছি ৭৯ ওয়াট। কখনও ৭০, ৭২ কিংবা ৭৮ মেগা ওয়াট। এক্ষেত্রে আমাদের একেক এরিয়ার লাইন ১০ থেকে ২০ মিনিটের জন্য বিরতি দিয়ে আবার অন্য ডিভিশনে সাপ্লাই দেয়। এতে সামঞ্চজস্যতাও আসে আবার ট্রান্সফরমারের ফিউজ পুড়ে যাওয়া থেকেও পরিত্রাণ মেলে।’

এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ভবিষ্যতে কোন পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কী? নাকি এভাবেই চলবে সামঞ্জসতা? উত্তরে প্রধান প্রকৌশলী জানান, ‘এনিয়ে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে এবং বর্তমানে কাজও চলছে। বর্তমানে প্রতিটি বাড়িতে স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটার লাগানো হচ্ছে। এতে করে কোন বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে যদি অনাকাঙ্খিত বিদ্যুতের লোড নেয় তাহলে সেই বাড়ির বা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে মিটারে থাকা একটি ফাংশনের কারণে। পরে অভিযোগ কেন্দ্রে বিষয়টি জানালে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। এতে করে ধীরে ধীরে অনাকাঙ্খিত লোডও কমে আসবে এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ সরবরাহ করাও সম্ভব হবে বলে জানান নেসকোর এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।’

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply